শিরোনাম: ড. হারুন অর রশিদ: ইসলামের ইতিহাসের অধ্যাপক এবং সঙ্গীত সাধক

লেখায়ঃ মোঃ তানবীরুল ইসলাম


ড. হারুন অর রশিদ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামীক ইতিহাস বিভাগের প্রফেসর হিসেবে শুধু একাডেমিক ক্ষেত্রেই নয়, বরং সংগীত জগতেও তিনি অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং সম্মানিত ব্যক্তিত্ব। নজরুল এবং রবীন্দ্র সংগীতে তাঁর অভূতপূর্ব দক্ষতা ও অসাধারণ প্রতিভা তাঁকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছে। বিটিভি এবং বেতারের মাধ্যমে তিনি নিয়মিত নজরুল সংগীত এবং রবীন্দ্র সংগীত পরিবেশন করে দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছেন। তাঁর সুরেলা কণ্ঠের জাদু শ্রোতাদের মুগ্ধ করে রাখে এবং তাঁর গান দেশের সংগীতপ্রেমীদের হৃদয়ে এক ভিন্ন আবেদন সৃষ্টি করে।


প্রফেসর এবং সংগীতশিল্পী: দ্বৈত ভূমিকার এক চমৎকার মিলন


ড. হারুন অর রশিদ ইসলামীক ইতিহাস বিষয়ে অধ্যাপনা করেন এবং একাডেমিক জগতে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। ইসলামী ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের ওপর তাঁর গবেষণা এবং পড়ানোতে এক বিশেষ দক্ষতা রয়েছে। শিক্ষক হিসেবে তাঁর শিক্ষার্থীদের মাঝে একটি চিরস্থায়ী প্রভাব পড়েছে, যেখানে তিনি ধর্মীয় ইতিহাস ও সংস্কৃতির নানা জটিল দিকগুলোর সহজবোধ্য ব্যাখ্যা প্রদান করেন। একাধারে একজন বিশিষ্ট শিক্ষক এবং সংগীতশিল্পী হওয়ার ফলে তাঁর ব্যক্তিত্বে এক অনন্যতা দেখা যায়, যা তাঁর ছাত্রছাত্রী এবং শ্রোতাদের কাছে গভীরভাবে প্রভাবিত করে।


সঙ্গীত জগতে অবদান


ড. হারুন অর রশিদের সঙ্গীত যাত্রা শুরু হয়েছিল ছোট বেলায়, যখন তিনি পরিবারের মধ্যে সঙ্গীতের প্রাথমিক পাঠ গ্রহণ করেন। তাঁর প্রাথমিক শিক্ষার পর, তিনি নজরুল এবং রবীন্দ্র সঙ্গীতের প্রতি গভীর আগ্রহী হয়ে ওঠেন এবং এই দুই ধারার সঙ্গীতের ওপরই নিজেকে নিবেদন করেন। তাঁর মতে, সংগীত কেবল বিনোদনের মাধ্যম নয়, বরং মানুষের মন, মেধা এবং আত্মার এক পরিশুদ্ধির পথ।


নজরুল এবং রবীন্দ্রনাথের গান তাঁর জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এঁদের গানের গভীরতা ও ভাবনা তাঁকে আকৃষ্ট করেছে এবং তিনি সংগীতের মাধ্যমে তাঁদের চিন্তা ও অনুভূতিকে শ্রোতাদের কাছে পৌঁছে দিতে চান। তিনি প্রতিমাসে বিটিভি এবং বেতারে নজরুল সংগীত এবং রবীন্দ্র সঙ্গীত পরিবেশন করে দেশের সাংস্কৃতিক জগতে বিশেষ অবদান রেখে চলেছেন।


২৩ বছরের দীর্ঘ সাধনা


ড. হারুন অর রশিদ তাঁর গানের কণ্ঠকে মাধুর্যময় করে তোলার জন্য ২৩ বছর ধরে রেওয়াজ করে আসছেন। তাঁর মতে, প্রতিদিনের রেওয়াজ, কঠোর পরিশ্রম এবং অধ্যবসায়ই তাঁর সঙ্গীতকে এতো জনপ্রিয় করেছে। সংগীত জগতে নিজের স্বতন্ত্র স্থান প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি নিয়মিত রেওয়াজ করেন এবং নতুন নতুন গান শেখার চেষ্টা করেন। তাঁর সাধনা তাঁকে যে অবস্থানে নিয়ে গিয়েছে, সেখানে পৌঁছানো কেবল কঠোর পরিশ্রমের ফল। তাঁর কণ্ঠে যেমন মাধুর্য রয়েছে, তেমনই সংগীতের প্রতি গভীর ভালোবাসা এবং আন্তরিকতা প্রতিফলিত হয়।


নজরুল এবং রবীন্দ্র সংগীতে অবদান


ড. হারুন অর রশিদ নজরুল এবং রবীন্দ্র সংগীতকে আধুনিক প্রজন্মের কাছে জনপ্রিয় করে তুলতে কাজ করে যাচ্ছেন। নজরুলের গজল, ইসলামী সংগীত এবং প্রার্থনামূলক গান তাঁর পরিবেশনায় একটি বিশেষ আবেদন সৃষ্টি করে। তিনি এই গানের মধ্যে এমন কিছু অন্তর্নিহিত ভাব প্রকাশ করেন যা মানুষকে ঈশ্বরের সান্নিধ্যে নিয়ে যেতে সাহায্য করে।


অন্যদিকে রবীন্দ্রনাথের গানেও তিনি পারদর্শী। তাঁর গলায় রবীন্দ্রনাথের গান শুনে শ্রোতারা মুগ্ধ হয়ে যান। রবীন্দ্রনাথের গানে মানুষের জীবন, প্রেম, প্রকৃতি, এবং ভাবনার গভীরতা প্রকাশ পায়। ড. হারুন অর রশিদ রবীন্দ্রনাথের গান গাইতে গিয়ে এই ভাবনাগুলোকে তাঁর নিজস্ব অনুভবের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলেন, যা শ্রোতাদের হৃদয়কে স্পর্শ করে।


সুমধুর কণ্ঠের মুগ্ধতা


ড. হারুন অর রশিদের সুমধুর কণ্ঠে সংগীতের জাদু শ্রোতাদের মুগ্ধ করে রাখে। তাঁর কণ্ঠে যেমন সুর রয়েছে, তেমনই তাঁর উচ্চারণ এবং গানের ভাব প্রকাশের ক্ষমতা অসাধারণ। তাঁর কণ্ঠে সংগীত শোনার অভিজ্ঞতা অত্যন্ত মনোরম, যা শ্রোতাদেরকে সংগীতের গভীরতায় নিয়ে যায়। তাঁর কণ্ঠের এই সুরেলা মাধুর্য এবং সংগীতের প্রতি ভালোবাসা তাঁর পরিবেশনাকে একটি ভিন্ন মাত্রা প্রদান করে।


ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য প্রেরণা


ড. হারুন অর রশিদ তাঁর সঙ্গীত জীবন এবং শিক্ষকতা জীবন উভয় ক্ষেত্রেই এক অসাধারণ প্রেরণা হিসেবে বিবেচিত হন। তাঁর সংগীত প্রতিভা এবং অধ্যবসায় নতুন প্রজন্মের কাছে একটি উদাহরণ হিসেবে কাজ করে। তিনি প্রমাণ করেছেন যে একজন মানুষ একই সঙ্গে একাধিক ক্ষেত্রে সফল হতে পারেন যদি তাঁর মধ্যে প্রতিভা এবং পরিশ্রমের যোগসূত্র থাকে।


ড. হারুন অর রশিদের এই সংগীতময় জীবন আমাদের অনুপ্রাণিত করে যে নিজের প্রতিভা এবং ভালোবাসাকে কাজে লাগিয়ে মানুষ কিভাবে সমাজের উন্নয়নে অবদান রাখতে পারে।