আমি যাদি আরব হতাম গানটির ব্যাখ্যা জানুন।যেহেতু আপনি একজন গান প্রেমী তাই আপনার জানা প্রয়োজন।


ড. হারুন অর রশিদ বিটিভি এবং বেতার রাজশাহী ইউনিভার্সিটি


গানটি লিখেছেন বিখ্যাত বাংলা কবি কাজী নজরুল ইসলাম। এটি তাঁর লেখা একটি আধ্যাত্মিক ও গম্ভীর গান, যেখানে তিনি নবী মুহাম্মদ (সা.) এবং তাঁর পরিবারের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা প্রকাশ করেছেন।


গানটি সর্বপ্রথম গেয়েছেন শ্রদ্ধেয় কণ্ঠশিল্পী মুহম্মদ রফি। তবে, কাজী নজরুল ইসলামের এই গানের অনেক ভার্সন রয়েছে, এবং বিভিন্ন শিল্পী বিভিন্ন সময়ে এটি গেয়েছেন। কিন্তু রফি সাহেব এর অন্যতম প্রথম গায়ক হিসেবে পরিচিত।




সম্পুর্ন গানঃ


আমি যদি আরব হতাম, মদিনারই পথ

এই পথে মোর চলে যেতেন

এই পথে মোর চলে যেতেন নূরনবী হযরত

আমি যদি আরব হতাম, মদিনারই পথ

পয়জার তার লাগতো এসে আমার কঠিন বুকে

আমি ঝর্ণা হয়ে গলে যেতাম অমনি পরম সুখে

সেই চিহ্ন বুকে পুরে পালিয়ে যেতাম কোহ-ই তূরে

চিহ্ন বুকে পুরে পালিয়ে যেতাম কোহ-ই তূরে

দিবানিশি করতাম তার

দিবানিশি করতাম তার কদম জিয়ারত

আমি যদি আরব হতাম, মদিনারই পথ

এই পথে মোর চলে যেতেন

এই পথে মোর চলে যেতেন নূরনবী হযরত

আমি যদি আরব হতাম, মদিনারই পথ

মা ফাতেমা খেলতো এসে আমার ধূলি লয়ে

আমি পড়তাম তার পায়ে লুটিয়ে

ফুলের রেণু হয়ে

ফুলের রেণু হয়ে

ফুলের রেণু হয়ে

হাসান হোসেন হেসে হেসে

নাচতো আমার বক্ষে এসে

হাসান হোসেন হেসে হেসে

নাচতো আমার বক্ষে এসে

চক্ষে আমার বইতো নদী

চক্ষে আমার বইতো নদী পেয়ে সে নিয়ামত

আমি যদি আরব হতাম, মদিনারই পথ

এই পথে মোর চলে যেতেন

এই পথে মোর চলে যেতেন নূরনবী হযরত

আমি যদি আরব হতাম, মদিনারই পথ


চলুন এবার আমরা জানবো গানটির ব্যাখ্যাঃ


"আমি যদি আরব হতাম, মদিনারই পথ" গানটি একটি আবেগপূর্ণ এবং আধ্যাত্মিক রচনা, যেখানে গায়ক তার অন্তরের ইচ্ছা ও সাধনা প্রকাশ করেছেন। গানের প্রতিটি লাইন মুসলিম সম্প্রদায়ের এক মহান অনুভূতি ও সম্মানিত ব্যক্তিত্বদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা বহন করে। আসুন প্রতিটি লাইন ব্যাখ্যা করি:
1. **"আমি যদি আরব হতাম, মদিনারই পথ / এই পথে মোর চলে যেতেন"**  
   এখানে গায়ক তাঁর দুঃখ এবং আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করছেন যে, যদি তিনি আরব দেশের বাসিন্দা হতেন, তবে তিনি মদিনার পথে চলতেন, যেখানে নবী মুহাম্মদ (সা.) বসবাস করেছিলেন। এটি একটি আধ্যাত্মিক ও শ্রদ্ধাশীল ইচ্ছা, যেখানে গায়ক নবীজির সঙ্গে থাকার এবং তাঁর পথ অনুসরণের ইচ্ছা প্রকাশ করছেন।
2. **"এই পথে মোর চলে যেতেন নূরনবী হযরত"**  
   এখানে 'নূরনবী হযরত' বলতে নবী মুহাম্মদ (সা.) কে বোঝানো হচ্ছে। গায়ক তাঁর অনুভূতি প্রকাশ করছেন যে, তিনি যদি আরব হতেন, তবে এই পথে নবীজির পায়ের ছাপ অনুসরণ করতেন।
3. **"পয়জার তার লাগতো এসে আমার কঠিন বুকে"**  
   এখানে গায়ক তাঁর হৃদয়ের অবস্থা বর্ণনা করছেন, যেখানে নবীজির পা বা পবিত্রতার ছোঁয়া, তাঁর মনের কঠিন বা কঠোর দিকটি কোমল করে দিত। 'পয়জার' বলতে হয়তো নবীজির পবিত্রতা বা প্রভাব বোঝানো হচ্ছে, যা তাঁর অন্তরে আধ্যাত্মিক পরিবর্তন আনবে।
4. **"আমি ঝর্ণা হয়ে গলে যেতাম অমনি পরম সুখে"**  
   গায়ক তাঁর অভ্যন্তরীণ শান্তি এবং পরম সুখের কথা বলছেন, যেখানে তিনি নবীজির পায়ের ছোঁয়া পেলে তাঁর হৃদয় ঝর্ণার মতো প্রবাহিত হয়ে যেত, এবং সেখান থেকে পরম শান্তি অনুভব করতেন।
5. **"সেই চিহ্ন বুকে পুরে পালিয়ে যেতাম কোহ-ই তূরে"**  
   কোহ-ই তূর, যার অর্থ হলো সেই পাহাড় যেখানে হযরত মোসা (আ.) আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন। এখানে গায়ক চাইছেন যে, নবীজির পবিত্র চিহ্ন তাঁর অন্তরে রয়ে গিয়ে সেই চিহ্নকে ধারণ করে তিনি একধরনের আত্মিক উচ্চতায় পৌঁছান। তিনি যেন আধ্যাত্মিক দিক থেকে উন্নত হন।
6. **"চিহ্ন বুকে পুরে পালিয়ে যেতাম কোহ-ই তূরে"**  
   পূর্বের বর্ণনা পুনরাবৃত্তি হলেও, এতে গায়ক তাঁর অন্তরের গভীরে নবীজির আধ্যাত্মিক চিহ্ন ধারণ করার ইচ্ছা প্রকাশ করছেন।
7. **"দিবানিশি করতাম তার / দিবানিশি করতাম তার কদম জিয়ারত"**  
   'দিবানিশি' মানে রাতে জেগে থাকা, এবং 'কদম জিয়ারত' বলতে নবীজির পা বা তাঁর মাজারে শ্রদ্ধা নিবেদন করা বোঝানো হচ্ছে। গায়ক তাঁর রাতের সময় নবীজির স্মরণে কাটানোর কথা বলছেন, তাঁর পবিত্র পদধূলি বা মাজারের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করতে।
8. **"মা ফাতেমা খেলতো এসে আমার ধূলি লয়ে"**  
   এখানে গায়ক নবীজির কন্যা হযরত ফাতেমা (রা.)-এর প্রতি তাঁর গভীর ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধা প্রকাশ করছেন। তিনি বলেছেন, মা ফাতেমা যদি তাঁর জীবনে আসতেন, তাহলে তিনি তাঁর ধূলি নিতেন এবং গৌরব অনুভব করতেন।
9. **"আমি পড়তাম তার পায়ে লুটিয়ে / ফুলের রেণু হয়ে"**  
   গায়ক মনে করেন, হযরত ফাতেমার (রা.) পায়ের কাছে তিনি বিনয় ও শ্রদ্ধা নিবেদন করতে চাইতেন এবং ফুলের পাপড়ির মতো তাঁর পদতলে শুয়ে থাকতে চাইতেন, যেন তিনি নবী পরিবারের পবিত্রতা অনুভব করতে পারেন।
10. **"হাসান হোসেন হেসে হেসে / নাচতো আমার বক্ষে এসে"**  
    হাসান ও হোসেন, নবী মুহাম্মদের (সা.) নাতি, গায়ক তাঁদের সঙ্গে খুশি ও আনন্দ ভাগাভাগি করতে চাচ্ছেন। তারা যদি তাঁর কাছে আসতেন, তবে গায়ক মনে করেন, তাঁর হৃদয়ে আনন্দের সঙ্গীত বাজতো।
11. **"চক্ষে আমার বইতো নদী / চক্ষে আমার বইতো নদী পেয়ে সে নিয়ামত"**  
    গায়ক তাঁর চোখে অশ্রু বা আনন্দের নদী বইতে দেখছেন, যেহেতু তিনি নবী পরিবারের পবিত্রতা ও শান্তি অনুভব করছেন। তাঁর চোখে ওই আনন্দের অশ্রু এমন এক নিয়ামত, যা তাঁর জীবনের শুদ্ধতা ও আধ্যাত্মিক শান্তি প্রকাশ করছে।


গানটি মদিনা, নবী মুহাম্মদ (সা.), হযরত ফাতেমা (রা.) এবং তাঁর পরিবারের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসার অনুভূতি প্রকাশ করে। এটি এক ধরনের আধ্যাত্মিক সান্নিধ্য এবং শান্তির আকাঙ্ক্ষা, যেখানে গায়ক নবীজির সান্নিধ্য কামনা করছেন এবং তাঁর অনুসরণে জীবন কাটানোর ইচ্ছা প্রকাশ করছেন